পঞ্চচল্লিশ বছর বয়সে, অলোক কাপুর ছিলেন সাফল্যের এক জীবন্ত প্রতিমূর্তি। তার নামটা কলকাতা কর্পোরেট জগতে উচ্চারিত হতো শ্রদ্ধা এবং ভয়ের সাথে। শূন্য থেকে শুরু করে, নিজের বুদ্ধি, কঠোর পরিশ্রম আর নির্দয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার জোরে সে যে বিশাল সফটওয়্যার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল, তা ছিল অনেকের কাছেই এক অবিশ্বাস্য অনুপ্রেরণার গল্প। আর তার আলিপুরের পেন্টহাউসটা? সেটা ছিল সেই সাফল্যের এক উদ্ধত, আকাশছোঁয়া বিজ্ঞাপন। [আলিপুরের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের ছবি] চল্লিশ তলার ওপর, কাঁচের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা সেই ফ্ল্যাট থেকে পুরো কলকাতা শহরটাকে দেখাতো পায়ের নিচে পড়ে থাকা এক খেলনার শহরের মতো।
এই বিশাল, বিলাসবহুল জগতে, অলোকের জীবনটা ছিল নিখুঁতভাবে সাজানো। তার দামী স্যুট, তার লিমিটেড এডিশন ঘড়ি, তার গ্যারাজে দাঁড়ানো জার্মান স্পোর্টস কার—সবকিছুই ছিল তার ক্ষমতা আর রুচির প্রতীক। কিন্তু এই নিখুঁত ছবির সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দামী অংশটা ছিল তার স্ত্রী, আটত্রিশ বছর বয়সী রীনা কাপুর।
রীনা ছিল এক আশ্চর্য সুন্দরী মহিলা। এক পরিণত বয়সের সৌন্দর্য, যা সময়ের সাথে সাথে আরও গভীর, আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। লম্বা, ছিপছিপে গড়ন, ফর্সা রঙ, আর টানা টানা দুটো চোখ, যার গভীরে লুকিয়ে ছিল এক অতল, বিষণ্ণ সমুদ্র। সে ছিল অভিজাত, রুচিশীল এবং শান্ত। সে ছিল অলোক কাপুরের নিখুঁত ট্রফি ওয়াইফ। যে নারী তার স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে হাসে, যে নারী তার স্বামীর সাফল্যের অলঙ্কার হয়ে পার্টিতে ঘোরে, কিন্তু যার নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই।
তাদের সম্পর্কটা ছিল এই পেন্টহাউসের মতোই—বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর, শীতল, কিন্তু ভেতরে প্রাণহীন। অলোক তার কাজে এতটাই মগ্ন ছিল যে, তার স্ত্রীর শরীরের বা মনের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় বা ইচ্ছা, কোনোটিই তার ছিল না। তাদের শোবার ঘরটা ছিল দুটো ভিন্ন গ্রহের মতো, যেখানে দুটো মানুষ নিজেদের একাকীত্ব নিয়ে বাস করত।
এই সাজানো, প্রাণহীন নাটকের মঞ্চে প্রবেশ ঘটল এক নতুন চরিত্রের। রাহুল।
আঠাশ বছর বয়সী রাহুল ছিল অলোকের কোম্পানির নতুন, উজ্জ্বলতম তারকা। সে ছিল তরুণ, উচ্চাভিলাষী এবং অসম্ভব প্রতিভাবান। আই.আই.টি. থেকে পাশ করে, বিদেশের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে, সে যোগ দিয়েছিল অলোকের কোম্পানিতে, কারণ সে চ্যালেঞ্জ ভালোবাসত। তার চোখে ছিল এক বাঘের মতো ক্ষুধা—সাফল্যের জন্য, ক্ষমতার জন্য।
অলোক তার এই নতুন, প্রতিভাবান জুনিয়রকে প্রথম দিন থেকেই লক্ষ করেছিল। রাহুলের মধ্যে সে নিজের তরুণ বয়সের ছায়া দেখতে পেত। তাই, একদিন সন্ধ্যায়, একটা বড় প্রজেক্টের সাফল্যের পর, অলোক রাহুলকে প্রভাবিত করার জন্য এবং কাজের আরও গভীর আলোচনার জন্য তার পেন্টহাউসে ডিনারে আমন্ত্রণ জানাল।
রাহুল এই আমন্ত্রণ পেয়ে একই সাথে উত্তেজিত এবং কিছুটা নার্ভাস ছিল। অলোক কাপুর ছিলেন তার আদর্শ। তার বাড়িতে ডিনারের আমন্ত্রণ পাওয়াটা ছিল রাহুলের কাছে এক বিশাল সম্মানের বিষয়। সে তার সবচেয়ে ভালো শার্টটা পরে, এক বোতল দামী ওয়াইন হাতে নিয়ে, কাঁটায় কাঁটায় রাত আটটায় অলোকের ফ্ল্যাটের দরজায় এসে দাঁড়াল।
দরজাটা খুলেছিল রীনা।
আর সেই মুহূর্তে, রাহুলের পৃথিবীটা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল।
সে তার বসের স্ত্রীর কথা শুনেছিল। সে জানত, অলোক কাপুরের স্ত্রী খুব সুন্দরী। কিন্তু বাস্তবটা ছিল তার কল্পনারও বাইরে।
দরজায় দাঁড়িয়েছিল এক দেবী। তার পরনে ছিল একটা সাধারণ, কিন্তু খুব দামী, হালকা নীল রঙের শিফনের শাড়ি। শাড়ির আঁচলটা তার কাঁধের ওপর দিয়ে আলগাভাবে ফেলা, যা তার মসৃণ গলা আর আকর্ষণীয় কলারবোনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। তার চুলগুলো ছিল খোলা, পিঠের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে পড়া এক কালো ঝর্ণার মতো। তার মুখে ছিল খুব হালকা সাজ, কিন্তু তার চোখ দুটো? সেই দুটো চোখ ছিল গভীর, বিষণ্ণ, আর আশ্চর্যরকমভাবে জীবন্ত।
রাহুল প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ল না। সে অনুভব করল এক তীব্র, প্রায় যন্ত্রণাদায়ক আকর্ষণ। রীনার সৌন্দর্য, তার আভিজাত্য, আর তার চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই নিঃসঙ্গতা—সবকিছু মিলে রাহুলকে এক ঝটকায় মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছিল।
“আপনি নিশ্চয়ই রাহুল?” রীনার গলাটা ছিল নরম, মধুর, ঠিক যেন কোনো বাদ্যযন্ত্রের সুর।
“হ্যাঁ… আমি… নমস্কার, ম্যাডাম,” রাহুল কোনোমতে উত্তর দিল।
“ভেতরে আসুন,” রীনা সামান্য হেসে তাকে ভেতরে আসার পথ করে দিল।
রাহুল যখন তাদের বিশাল, শিল্পসম্মতভাবে সাজানো ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করল, তখন তার চোখ দুটো ছিল শুধু রীনার ওপর। সে দেখছিল, কীভাবে রীনা হাঁটছে, কীভাবে তার শাড়ির আঁচলটা তার ভারী, গোল নিতম্বের ওপর দুলছে, কীভাবে তার পিঠের ওপর দিয়ে ব্লাউজের ফিতেটা একটা誘惑ের রেখা তৈরি করেছে।
“আরে, রাহুল! এসে গেছো! বোসো, বোসো,” অলোক তার স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল। তার হাতে ছিল একটা হুইস্কির গ্লাস। “রীনা, রাহুলের জন্য একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে এসো।”
রীনা কোনো কথা না বলে, নিঃশব্দে বারের দিকে এগিয়ে গেল।
ডিনারের টেবিলটা ছিল এক নীরব যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। টেবিলে সাজানো ছিল দামী কাটলারি, ক্রিস্টালের গ্লাস, আর রীনার নিজের হাতে রান্না করা জিভে জল আনা সব পদ। কিন্তু পরিবেশটা ছিল শীতল, প্রাণহীন।
রাহুল খুব তাড়াতাড়িই লক্ষ্য করল যে অলোক তার স্ত্রীর প্রতি কতটা উদাসীন। সে প্রায় পুরোটা সময়ই কথা বলছিল নিজের কোম্পানি, নিজের সাফল্য, আর তাদের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে। সে একবারও রীনার দিকে তাকাচ্ছিল না, একবারও তার রান্নার প্রশংসা করছিল না। রীনা ছিল সেই টেবিলে উপস্থিত থেকেও অনুপস্থিত। সে ছিল এক সুন্দর ছায়ামূর্তি, যে নিঃশব্দে খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে তার স্বামীর কথায় মৃদু,হাসি হাসছে।
এই বৈপরীত্যটা রাহুলের মনে রীনার প্রতি এক গভীর সহানুভূতি এবং অলোকের প্রতি এক ধরনের অব্যক্ত অবজ্ঞা তৈরি করছিল। তার মনে হচ্ছিল, এইরকম একজন সুন্দরী, গুণী মহিলাকে যে পুরুষ অবহেলা করতে পারে, সে হয় অন্ধ, অথবা মূর্খ।
রাহুলের চোখ দুটো বারবার রীনার দিকে চলে যাচ্ছিল। সে দেখছিল, রীনা যখন খাবার পরিবেশন করার জন্য ঝুঁকছে, তখন তার শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে তার ভরাট, ফর্সা বুকের উপত্যকাটা ক্ষণিকের জন্য পড়ছে। সে দেখছিল, তার হাতের মসৃণ, ফর্সা ত্বক, তার আঙুলের সুন্দর গঠন।
আর রীনা? সেও রাহুলের এই চুরি করা, প্রশংসাসূচক চাহনিটা লক্ষ্য করছিল। বহু বছর পর, হয়তো তার বিয়ের পর এই প্রথমবার, কোনো পুরুষ তার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিল। তার স্বামীর উদাসীনতা তাকে এতটাই অভ্যস্ত করে তুলেছিল যে, সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল যে সে একজন কাঙ্ক্ষিত নারী। রাহুলের এই আগ্রহী, প্রায় পূজার মতো দৃষ্টি তার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা নারীসত্তাকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলছিল। সে প্রথমে লজ্জা পাচ্ছিল, অস্বস্তি বোধ করছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে, এই মনোযোগটা তার ভালো লাগতে শুরু করল। সে ইচ্ছা করেই, খাবার নেওয়ার সময়, রাহুলের আঙুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিল। সে কথা বলার সময়, রাহুলের চোখের দিকে সরাসরি তাকাচ্ছিল।
তাদের মধ্যে শুরু হয়েছিল এক নীরব, বিপজ্জনক খেলা। এক অব্যক্ত আকর্ষণের খেলা।
রীনার এই অতৃপ্তি, তার এই নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য, আর তার এই নীরব সাড়া—সবকিছু মিলে রাহুলের মনে এক নিষিদ্ধ, ভয়ংকর চিন্তার বীজ রোপণ করছিল। সে কল্পনা করতে শুরু করেছিল, এইরকম একজন মহিলাকে পাওয়ার অনুভূতি কেমন হতে পারে। এই মহিলা শুধু সুন্দরী নয়, সে তার বসের স্ত্রী। অলোক কাপুরের সবচেয়ে দামী, সবচেয়ে সুরক্ষিত সম্পত্তি। আর সেই সম্পত্তিটাকে দখল করার চিন্তাটা রাহুলের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আগ্রাসী মনটাকে এক তীব্র, বিকৃত আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছিল।
ডিনার টেবিলের সেই নীরব, অব্যক্ত আকর্ষণের খেলাটা চলতে থাকল। অলোক তার নিজের সাফল্যের গল্পে এতটাই মগ্ন ছিল যে, সে তার পায়ের তলায় যে এক ভয়ংকর সুন্দর ষড়যন্ত্রের বীজ রোপিত হচ্ছে, তা এক বিন্দুও টের পেল না। রাহুল এবং রীনার মধ্যে তখন আর কোনো শব্দের প্রয়োজন হচ্ছিল না। তাদের চোখই তাদের ভাষা হয়ে উঠেছিল। রাহুল যখন জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিচ্ছিল, তখন তার আঙুলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে রীনার আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আর রীনাও সেই স্পর্শে কেঁপে উঠলেও, তার হাতটা সরিয়ে নিচ্ছিল না।
ডেজার্ট পরিবেশন করার সময় এই খেলাটা আরও গভীর হলো। রীনা নিজের হাতে বানানো পায়েস নিয়ে এল। সে যখন রাহুলের বাটিতে পায়েস ঢেলে দিচ্ছিল, তখন সে ইচ্ছা করে ঝুঁকে পড়ল। তার শাড়ির আঁচলটা আবার সামান্য খসে পড়ল, আর তার বুকের গভীর উপত্যকাটা রাহুলের চোখের সামনে কয়েক মুহূর্তের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল। রাহুল দেখল, রীনার ফর্সা ত্বকের ওপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম। এই দৃশ্যটা ছিল এতটাই অন্তরঙ্গ, এতটাই ব্যক্তিগত যে রাহুলের নিঃশ্বাসটা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
অবশেষে, রাত যখন প্রায় এগারোটা, তখন রাহুল বুঝতে পারল, তার এবার ওঠা উচিত। সে খুব বিনীতভাবে, অলোকের কথার মাঝখানেই, তাকে থামিয়ে দিল।
“স্যার, আজ তাহলে আমি উঠি। অনেক রাত হলো,” সে বলল।
“আরে, বোসো বোসো! এখনই কীসের তাড়া?” অলোক তার হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল।
“না, স্যার। কাল সকালে একটা জরুরি কাজ আছে,” রাহুল একটা মিথ্যে অজুহাত দিল। সে আর এক মুহূর্তও এই দমবন্ধ করা পরিবেশে থাকতে পারছিল না। তার শরীর এবং মন জুড়ে তখন শুধু রীনার অস্তিত্ব।
“ঠিক আছে,” অলোক অবশেষে রাজি হলো। “রীনা, রাহুলকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসো।”
এই বিদায়ের মুহূর্তটাই ছিল এই রাতের চূড়ান্ত অঙ্ক।
অলোক তার নতুন প্রজেক্টের একটা ফাইল খোঁজার জন্য তার স্টাডি রুমের দিকে এগিয়ে গেল। আর রাহুল আর রীনা, পাশাপাশি, নিঃশব্দে, ফ্ল্যাটের বিশাল সদর দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল। এই কয়েক সেকেন্ডের হাঁটা পথটা তাদের কাছে মনে হচ্ছিল অনন্তকালের মতো দীর্ঘ। তাদের দুজনের শরীরেই তখন বইছিল এক তীব্র, বৈদ্যুতিক স্রোত।
দরজার সামনে এসে, রাহুল তার জুতো পরল। তারপর সে সোজা হয়ে দাঁড়াল। সে রীনার দিকে ফিরল।
“আজকের নৈশভোজের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মহাশয়া,” সে খুব আনুষ্ঠানিক গলায় বলল। “আপনার হাতের রান্না অবিশ্বাস্য।”
“আবার আসবেন,” রীনাও মৃদু হেসে উত্তর দিল।
তারপর, রাহুল যা করল, তা ছিল এক সাহসী, প্রায় বেপরোয়া চাল। সে তার ডান হাতটা রীনার দিকে বাড়িয়ে দিল। করমর্দনের জন্য।
রীনা এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তার বুকটা ধক্ করে উঠল। এই সাধারণ, আধুনিক আচরণটাই এই মুহূর্তে ছিল এক ভয়ংকর, নিষিদ্ধ আমন্ত্রণ। সে ইতস্তত করছিল। তার চোখ দুটো একবার অলোকের স্টাডি রুমের বন্ধ দরজার দিকে চলে গেল।
কিন্তু রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে, সে আর না করতে পারল না। রাহুলের চোখে ছিল এক মরিয়া, প্রায় প্রার্থনার মতো আর্তি।
রীনা তার কাঁপা কাঁপা, নরম হাতটা রাহুলের শক্তিশালী, উষ্ণ হাতের ওপর রাখল।
আর সেই স্পর্শের মুহূর্তে, তাদের দুজনের শরীরেই যেন আবার বিদ্যুৎ খেলে গেল। রাহুল রীনার হাতটা ধরল। কিন্তু সে সেটাকে করমর্দনের জন্য ঝাঁকাল না। সে শুধু ধরে রাখল। প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক মুহূর্ত বেশি।
সে তার আঙুলগুলো দিয়ে রীনার নরম হাতের তালুতে খুব আলতো করে চাপ দিল। এটা ছিল এক স্পষ্ট, গোপন সংকেত। এক অব্যক্ত প্রতিশ্রুতি।
তাদের চোখাচোখি হলো। সেই দৃষ্টিতে ছিল না কোনো শব্দ, কিন্তু ছিল হাজারো অব্যক্ত কথা। ছিল আকর্ষণ, ছিল কামনা, ছিল ভয়, আর ছিল এক ভয়ংকর সুন্দর, নিষিদ্ধ ভবিষ্যতের হাতছানি। তাদের চারপাশের জগৎটা—এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, এই নীরব রাত—সবকিছুই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। ছিল শুধু তারা দুজন।
ঠিক সেই মুহূর্তে, তাদের এই স্বপ্ন-ঘেরা বুদবুদটাকে ফাটিয়ে দিয়ে, স্টাডি রুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। অলোক ফাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে এল।
“রাহুল, তুমি এখনও যাওনি?”
অলোকের গলার আওয়াজ শুনে তারা দুজনই চমকে, একে অপরের হাত ছেড়ে দিল।
অলোক তাদের দিকে এগিয়ে এল। তার চোখ দুটো একবার রাহুলের দিকে, একবার রীনার দিকে ঘুরছিল। সে তাদের অস্বাভাবিক, কিছুটা অপরাধী মুখ দুটো দেখল। তার অভিজ্ঞ চোখ কি কিছু সন্দেহ করল?