শালীর পাঠ পঞ্চম পর্ব

0
(0)

রিসোর্টের সেই রাতের পর কয়েক মাস কেটে গিয়েছিল। আমাদের জীবনটা আবার তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছিল, অন্তত বাইরে থেকে দেখলে তাই মনে হতো। কিন্তু সেই রাতের স্মৃতিটা আমার আর রিয়ার মধ্যে একটা অদৃশ্য, উত্তপ্ত সুতোর মতো যোগসূত্র তৈরি করে রেখেছিল। আমরা দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলতাম, স্বাভাবিক আচরণ করতাম, কিন্তু আমাদের চোখের দৃষ্টি যখন মিলিত হতো, তখন হাজারটা না-বলা কথা ভেসে উঠত। আমাদের সেই গোপন অধ্যায়টা একটা মূল্যবান, বিপজ্জনক সম্পদের মতো আমরা দুজনেই মনের গভীরে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

রিয়ার ফোনটা যেদিন এসেছিল, সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই খেলার শেষ পর্বটা এবার শুরু হতে চলেছে। ওর গলার স্বরে যে আত্মবিশ্বাস ছিল, তা শুনে আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। একদিকে ছিল আনন্দ, যে সে finalmente জীবনে এগিয়ে যেতে পারছে। অন্যদিকে ছিল একটা সূক্ষ্ম, ধারালো ঈর্ষার কাঁটা। যে পাখিটাকে আমি আর নীলা মিলে উড়তে শিখিয়েছিলাম, সে আজ নিজের আকাশ খুঁজে নিয়েছে।

নির্দিষ্ট দিনে, রিয়া তার নতুন প্রেমিক রোহানকে নিয়ে আমাদের সাথে দেখা করতে এল। আমরা একটা ভালো রেস্তোরাঁয় ডিনারের আয়োজন করেছিলাম। হালকা আলো, নরম সঙ্গীত আর মার্জিত পরিবেশ।

রোহান আর রিয়াকে একসাথে ঢুকতে দেখে আমার বুকের ভেতরটা এক মুহূর্তের জন্য খালি হয়ে গেল। রোহান ছেলেটা দেখতে বেশ ভালো, লম্বা, ভদ্র এবং রুচিশীল। একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তার চোখেমুখে একটা সততার ছাপ আছে, আর সে যে রিয়ার প্রেমে গভীরভাবে মগ্ন, সেটা ওর তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

আমরা একটা কোণের টেবিলে বসলাম। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এটা একটা নিখুঁত পারিবারিক ডিনার। কিন্তু টেবিলের ওপরের হাসিমুখ আর ভদ্রতার আড়ালে, আমার, নীলা আর রিয়ার মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, তা শুধু আমরা তিনজনই জানতাম।

রোহান খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাথে কথা বলছিল। ওর কাজের কথা, ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিচ্ছিলাম, কিন্তু আমার মনের ভেতরে চলছিল অন্য এক হিসেব। আমি ভাবছিলাম, এই শান্ত, ভদ্র ছেলেটা কি জানে, ওর পাশে বসে থাকা এই মায়াবী চোখের মেয়েটা কতটা বন্য, কতটাร้อน হতে পারে? ও কি কোনোদিন জানতে পারবে, এই মেয়েটার ভেতরের আগুনটাকে কে জ্বালিয়েছিল?

ডিনারের সময় রিয়া যখন হাসিমুখে রোহানের সাথে কথা বলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে, টেবিলের নিচে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। রিয়া আলতো করে তার স্যান্ডেল পরা পা দিয়ে আমার পা ছুঁয়ে দিল। মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য। একটা বিদ্যুতের ঝলকের মতো। তারপরই সরিয়ে নিল, যেন কিছুই হয়নি।

আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম। ও রোহানের দিকেই তাকিয়ে হাসছিল, কিন্তু আমি জানি, ওই স্পর্শটা ছিল আমার জন্য। ওটা কোনো সাধারণ ভুল ছিল না। ওটা ছিল ওর তরফ থেকে একটা বিদায়ী সংকেত। একটা ধন্যবাদ। একটা স্মৃতিচারণ। আমাদের গোপন, নিষিদ্ধ অধ্যায়ের ওপর শেষ তুলির টান।

খাওয়ার শেষে আমি আর রোহান যখন বিল মেটানো নিয়ে কথা বলছিলাম, তখন নীলা আর রিয়া একসাথে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠল। আমার মন বলছিল, আসল কথাগুলো হয়তো সেখানেই হবে। দুই বোনের মধ্যে।

ওরা যখন ফিরে এল, তখন ডিনারের পর্ব শেষ। আমি নীলার চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখেমুখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি জানি, আমি সবটা জানি। ওয়াশরুমে দুই বোনের মধ্যে নিশ্চয়ই সব কথা হয়েছে। নীলার ওই হাসিটা ছিল একজন সফল, গর্বিত মেন্টরের হাসি, যে তার ছাত্রীকে জীবনে সফল হতে দেখে পরম তৃপ্তি পেয়েছে। আমাদের তিনজনের মধ্যে আর কোনো কথার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের চোখের ভাষাই যথেষ্ট ছিল।

রিয়ার চোখের ভাষা বলছিল: “ধন্যবাদ, জামাইবাবু। ধন্যবাদ দিদি। তোমাদের জন্যই আমি আজ নিজেকে ফিরে পেয়েছি, নিজের মূল্য বুঝতে শিখেছি।”

নীলার চোখের ভাষা বলছিল: “দেখেছ? আমাদের প্রোজেক্টটা কত সফল হয়েছে। ও আজ সম্পূর্ণা।”

আর আমার চোখের ভাষা হয়তো বলছিল: “আমি তোমাদের দুজনকেই ভালোবাসি, দুই ভিন্ন রূপে। ভালো থেকো, রিয়া।”

ডিনার শেষে রেস্তোরাঁর বাইরে আমরা বিদায় নিচ্ছিলাম। ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছিল। রোহান এগিয়ে এসে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করল। “খুব ভালো লাগল আপনাদের সাথে আলাপ করে,” ও আন্তরিকতার সাথেই বলল।

রিয়া প্রথমে নীলাকে জড়িয়ে ধরল। দুই বোন একে অপরকে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কয়েক মুহূর্তের জন্য সময়টা যেন থমকে গেল। আমরা একে অপরের চোখের দিকে সরাসরি তাকালাম। সেই রাতের রিসোর্টের ঘর, আমাদের শোবার ঘরের সেই চূড়ান্ত পরীক্ষা, প্রথম রাতের সেই মাতাল স্বীকারোক্তি—সবকিছু যেন একবার আমাদের দুজনের চোখের সামনে ভেসে উঠল আর মিলিয়ে গেল।

তারপর সে খুব স্বাভাবিক গলায়, একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “ভালো থেকো, জামাইবাবু।”

“জামাইবাবু”। এই একটা শব্দ। এই শব্দটা যেন আমাদের সমস্ত গোপন, নিষিদ্ধ সম্পর্কের ওপর একটা সভ্যতার পর্দা টেনে দিল। আমাদের ভেতরের প্রেমিক-প্রেমিকার সত্তাটাকে চিরদিনের মতো কবর দিয়ে আবার শালী-দুলাভাইয়ের সামাজিক পরিচয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এল। আমি বুঝলাম, আমাদের অধ্যায়টা এখানেই, এই মুহূর্তেই, শেষ হয়ে গেল।

ছয় মাস পর খুব ধুমধাম করে রিয়ার সাথে রোহানের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের মণ্ডপে, লাল বেনারসি আর গয়নায় সেজে, রিয়াকে যখন দেখলাম, তখন আমার মনে হচ্ছিল, একটা ভাঙা, ডানা ঝাপটাতে ভুলে যাওয়া পাখি আজ finalmente ডানা মেলে উড়ে যেতে শিখেছে। হয়তো আমাদের পথটা ঠিক ছিল না, হয়তো আমাদের সম্পর্কটা সমাজের চোখে পাপ, কিন্তু এই পাপই রিয়াকে তার হারানো আত্মবিশ্বাস, তার নারীসত্তার পরিচয় ফিরিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর, নীলা আমাকে পেছন থেকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল। আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। কোনো প্রয়োজনও ছিল না।

রিয়া এখন তার নিজের জীবনে, নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখী।

আর আমরা—আমি আর নীলা—আমাদের অদ্ভুত, জটিল, বাঁধনছাড়া আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ পৃথিবীতে ফিরে এসেছি। আমাদের দুজনের মধ্যে চিরদিনের জন্য রয়ে গেছে একটা মিষ্টি, বিপজ্জনক গোপন কথা। একটা নিষিদ্ধ অধ্যায়ের স্মৃতি, যা হয়তো আমাদের দাম্পত্যকে সারাজীবনের জন্য আরও বেশি উত্তেজক, আরও বেশি মজবুত করে তুলেছে। বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয়েছে।

কেমন লাগলো গল্পটি?

রেট দিতে ৫ স্টার নির্বাচন করুন!

সার্বিক ফলাফল 0 / ৫ । মোট ভোট 0

এখনো কেউ ভোট দেয়নি! প্রথম ভোটটি দিন !

যদি গল্পটি ভালো লেগে থাকে…

আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে অনুসরণ করুন!

দুঃখিত, গল্পটি আপনার ভালো লাগেনি!

আমাদের আরও উন্নত করতে সাহায্য করুন

দয়া করে লিখুন কীভাবে আমরা গল্পটি আরও ভালো করতে পারি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top